
আগামীকাল (মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ) উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পূর্ণরূপে চালু হতে যাচ্ছে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলসেতু। এর মাধ্যমে উত্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটলেও জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ না হওয়ায় সেতুর পুরোপুরি সুফল পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
যমুনা নদীর বুকে নির্মাণ হয়েছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের যমুনা রেলওয়ে সেতু। ৫০টি পিলারের উপর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওয়েদার স্টিলের ৪৯টি স্প্যানে পূর্ণরূপ পাওয়া ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের সেতুটি নির্মাণে প্রায় সাড়ে চার বছর কাজ করেছে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা। যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে বাংলাদেশ ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকার এই সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ১৮ মার্চ।
উদ্বোধনের আগেই কয়েক দফা ট্রায়াল রান শেষে গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে সেতুর একটি লাইন দিয়ে চলছে যাত্রীবাহী ট্রেন। প্রকল্প পরিচালক বলছেন, উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে পূর্ণরূপে সেতুটি চালু হলে ১শ’ থেকে ১শ’ ২০ কিলোমিটার গতিতে একসঙ্গে দুটি ট্রেন চলবে।
যমুনা রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এই সেতুতে যেহেতু ডাবল লাইন, তাই পূর্ণ গতিতে ট্রেইন চলাচল করতে পারবে। যেখানে আগে আমাদের সময় লাগত ৪০ থেকে ৫০ মিনিট, সেখানে এখন আমরা ৫ থেকে ৭ মিনিটেই সেতু পার হয়ে আরেক স্টেশনে পৌঁছতে পারব।’
তবে, সেতুটি চালু হলেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে দুই প্রান্তের সিংগেল রেলপথ। জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ১১৪ কিলোমিটার রেলপথটি সিংগেল লাইন হওয়ায় সেতুর পুরোপুরি সুফল পাবে না এই অঞ্চলের মানুষ। রেলপথটি ডাবল লাইনে উন্নীত না হলে সেতুটিকে ঘিরে পণ্য পরিবহণ ও যমুনা পাড়ে শিল্পায়নের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা অনেকাংশেই বাধাগ্রস্ত হবে, বলছেন ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মীর্জা মোস্তফা জামান বলেন, ‘আমরা যারা বাসে যাতায়াত করি, তারা ২টা ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় ভোগান্তির শিকার হই। রেলসেতু চালু হওয়ার মাধ্যমে আমাদের সেই ভোগান্তি দূর হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘রেলসেতুতে ডাবল লাইন হলেও সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমে সিঙ্গেল লাইনের কারণে আমরা পূর্ণ সুফল ভোগ করতে পারবো না।’
সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘উপকারিতা নিতে হলে আমাদের যে জিনিসটা দরকার সেটা হল শিল্পায়ন এবং সেটা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি এর পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে পারে যদি জয়দেবপুর থেকে যমুনা রেলসেতু, সেতু থেকে ইশ্বরদি পর্যন্ত ডাবল লেন এবং সর্বোপরি বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ রেললাইন প্রস্তুত হয়।’
সম্প্রতি সেতু পরিদর্শনে এসে রেলওয়ের মহাপরিচালক জানান, গুরুত্ব বিবেচনায় সেতুর দুই প্রান্তে ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণে ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। অনুমোদন ও অর্থায়ন পেলে দ্রুতই কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘দুই পাশে এখন যে-রকম চেক করে ট্রেনের সেতু পার হতে হয়, সেরকম এখন আর প্রয়োজন হবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা সময় সাশ্রয় হবে। ডাবল লাইন হওয়ার কারণে আমরা ট্রেন সংখ্যাও বাড়াতে পারবো প্রয়োজনে।’
২০২০ সালের ২৯’শে নভেম্বর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় দেশের দীর্ঘতম এই রেলসেতুর।