খুটিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, কাজ বন্ধ

প্রকাশিত: ১০:২০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২৫
Oplus_16908288
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে একটি দোতলা বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজে নিম্নমানের  নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে স্থানীয়দের বাধায় নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্মাণাধীন বিদ্যালয়ের নাম খুটিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এদিকে নতুন ভবন নির্মাণের শুরুতে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ খুঁড়ে মাটি নিয়ে বিদ্যালয়ের নিচু অংশে ফেলা হয়। যা এখনো ভরাট করে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও খুটিগাছা গ্রামবাসীর মাঝে ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় খুটিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তিন তলা ফাউন্ডেশনের এ ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় কোটি টাকা।
খুটিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক শিক্ষক সমিতির (পিটিএ) সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, নির্মাণ কাজে নিম্নমানের  ইট ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা ঠিকাদার মেসার্স আনিকা টেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. বজলুর রহমান ও তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী বাবুল আখতারকে অভিযোগ করেছি। পরে খুটিগাছা গ্রামের সাধারণ লোকজন নির্মাণ কাজে বাধা দেয়। (১০ মার্চ) সোমবার থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে।
দেশীগ্রাম ইউনিয়নের ছোট মাঝদক্ষিণা গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও ছাদেক আলী নামে বিদ্যালয়ের দুইজন নির্মাণ শ্রমিক বলেন, নিম্নমানের  ইট দিয়ে কিছু কাজ করা হয়েছে।
 পরে লোকজন বাধা দিলে অবশিষ্ট ইট বিদ্যালয়ের পুরান ভবনের সামনে রেখে দেওয়া হয়েছে। বালুর মানও খুব খারাপ। ঠিকাদার খারাপ বালুর উপর ভাল বালু ফেলেছে। আমারা খারাপ বালুর সাথে ভাল বালু মিশিয়ে কাজ করছি।
  বিশেষ সূত্রে সূত্রে জানা গেছে, তদারকি কর্মকর্তা বাবুল আখতারের সাথে যোগসাযোস করে বিদ্যালয় ভবনের যেটুকো নির্মাণ কাজ করা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার মো. বজলুর রহমান।
মেসার্স আনিকা টেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. বজলুর রহমান বলেন, নিম্নমানের  ইট ও বালু ব্যবহার করা হবে না। ইতোমধ্যে ইট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিদ্যালয়ের মাঠের গর্তে মাটি ভরাটের জন্য ছয় হাজার টাকা দিয়েছি মাঠ কমিটিকে।
অপরদিকে খুটিগাছা গ্রামের বাসিন্দা ও তাড়াশ পৌর বিএনপির ৭নং ওয়ার্ডের সভাপতি রেজাউল করিম শিল্পি বলেন, ছয় হাজার টাকা দিয়েছেন। কমপক্ষে আরো ১৫ হাজার টাকা লাগবে মাটি ফেলতে। বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে  নিম্নমানের  সামগ্রী ব্যবহার ও খেলার মাঠের গর্ত ভরাট করে না দেওয়ায় গ্রামবাসী চরম ক্ষোভে রয়েছেন।
তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী বাবুল আখতার বলেন, বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। মাঠের গর্ত ভরাটের জন্য ঠিকাদারের ১৮ হাজার টাকা দেওয়ার কথা মাঠ কমিটিকে।
খুটিগাছা গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে ও সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্র শিহাব ইসলাম বলেন, তাড়াশ পৌর এলাকার কোথাও খেলাধূলার উপযুক্ত মাঠ নেই। প্রায় সব ধরনের টুর্ণামেন্টের আয়োজন করা হয় খুটিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। রমজানের ঈদের পরের দিন এক দিনের ফুটবল টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। গর্ত ভরাট করে না দিলে খেলাধূলা করা সম্ভব না এ মাঠে।
খুটিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিলিমা মোহন্ত বলেন, বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজে অতি নিম্নমানের  সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। খেলার মাঠে গর্ত করে রাখা হয়েছে। ঠিকাদার ও তদারকি কর্মকর্তা কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। পরে বিদ্যালয়ের পিটিএ সভাপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সব কাজ ঠিকঠাক বুঝে নেওয়ার জন্য।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসেন বলেন, ইটের বিষয়ে জেনেছি। আমি কথা বলার পর নিম্নমানের  ইট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজুলল হক বলেন, বিদ্যালয় ভবন নিমার্ণে নিম্নমানের  ইট ব্যবহার করা হলে সেই অংশ ভেঙে ভাল ইট দিয়ে পুনরায় নির্মাণ কাজ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাইফুল ইসলাম  বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে বলে দিচ্ছি।