নলকা-পাঁচলিয়া মহাসড়কে চোরা কারবারি, দখলদারী, ডাকাতদের আশ্রয়কারী সামিদুলের গ্রেফতার চাই এলাকাবাসী

নলকা-পাঁচলিয়া মহাসড়কে চোরা কারবারি, দখলদারী, ডাকাতদের আশ্রয়কারী বিএনপি’র নেতা পরিচয়দানকারী কে এই সামিদুলকে নিয়ে চলছে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা।
প্রশাসনকে ফাঁকি দিতে হোয়াইটস অ্যাপ, ফেসবুক, ইমু সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ডিভাইসে ব্যক্তিগত কোন ছবি ব্যবহার করেনি সামিদুল। সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের জাহের পাগলা এর পুত্র সামিদুল। ৫ আগস্টের পুর্বে ছোটখাটো চোরাকারবারির ব্যবসা করলেও স্বৈরাচার পতনের পর সামিদুল নলকা-পাঁচলিয়া মহাসড়কে চোরা কারবারি, দখলদারী, ডাকাতদের আশ্রয়কারী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। তিনি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে মাত্র ৭মাসে নলকা ব্রীজের পশ্চিমে মহাসড়কের আলোকদিয়া বড় ধরনের চোরাই পয়েন্ট খুলে বসে। ব্যবসার সফলতা পেয়ে পাচলিয়া বাজারে পুর্ব পার্শ্বে মহাসড়কে উত্তরে অজিহা ট্রেডার্স এর নামে আরেকটি চোরাই পয়েন্ট গড়ে তোলেন। এতেও দ্রুত ব্যবসার সফলতা পায়। সর্বশেষে পাচলিয়া বাজারে পুর্ব পার্শ্বে দুটি চোরাই কারবারি পয়েন্ট জোরপুর্বক দখল করে নেন। যা নিয়ে সলঙ্গা থানায় একটি অভিযোগও দাখিল করা আছে। সামিদুল এর চোরাই ব্যবসা বৃহৎ আকারে প্রসার পাওয়ায় পাচলিয়া গ্রামের জহুরুল পুত্র ন্যাংড়া স্বপন, জহুরুল ও আলীম একাধিক ব্যবসার পার্টনারশীপ হয়। বর্তমানে সামিদুল এর চোরাই কারবারি ব্যবসার প্রায় দুই শিফটে ৩০/৩৫জন কর্মচারীও রয়েছে।
দৈনিক যুগের কথা পত্রিকায় ১৩ মার্চ ২০২৫ ইং তারিখে সামিদুলকে নিয়ে একটি স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসার কারনে সামিদুল তার চোরাই ব্যবসার কৌশল পরিবর্তন করে। বর্তমানে সামিদুলের ৪টি চোরাই পয়েন্টে কোন চোরাই পণ্য উঠানামা হচ্ছে না। চোরাই মাল ট্রাক থেকে নামাতে পাচলিয়া বাজার ও ভদ্রঘাট ইউনিয়নের তালুকদার বাজার এলাকা থেকে ট্রাকে উঠে পড়ে চোররা, কিছুক্ষন যাওয়ার পরও চোরাই পণ্যের বস্তা মহাসড়কে ট্রাকগুলো দুই তিন মিনিট দাড়িয়ে চোরাই পণ্য ফেলে দেওয়া হয়। দ্রুত ভ্যানযোগে মালগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। এইভাবে চলছে সামিদুলের চোরাই কারবারি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, যমুনা বহুমুখী সেতু পশ্চিম-সিরাজগঞ্জ রোড পর্যন্ত প্রতিনিয়ত ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। আর ডাকাতরা প্রথমে সিরাজগঞ্জ রোড থেকে নলকা ব্রীজ পশ্চিম পর্যন্ত প্রায় ১০টি চোরাই পয়েন্ট’র ঘরেই অবস্থান করে। রাত্রী যত গভীর হয় চোরাই গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা ডাকাতি করতে ঔঁত পেতে থাকে। দিনরাত ২৪ ঘন্টাই চোরাই পয়েন্টগুলো চোরাই মাল ক্রয়-বিক্রয় করা হচ্ছে। মহাসড়কে চোরাই মাল নামানো ও উঠানো ও ক্রয় বিক্রয়ের সময় টহলরত পুলিশের গাড়ি দেখলে পুলিশ কিছু না বলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশকে প্রতি মাসে হাদিয়া দেয় বলে মহাসড়কে চলাচলরত পথচারীরা, এলাকাবাসী বিভিন্ন ধরনের পুলিশী কার্যক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ চায়ের দোকানে, হাটবাজারে সমালোচনা করতে থাকে।
তথ্যানুসন্ধানে আরোও জানা যায়, উত্তরবঙ্গের মহাসড়ক সিরাজগঞ্জ রোড থেকে নলকা ব্রীজ পর্যন্ত বিভিন্ন ট্রাক থেকে চোরাই মাল ক্রয় করার জন্য ১০টি পয়েন্ট রয়েছে। এই চোরাই পয়েন্ট থেকে লোহার রোড, কয়লা, পাথর, চাল, গম, তিব্বত সয়াবিন তেলে ভূসি, বিভিন্ন গাড়ির ডিজেল, পেট্টোল, অকটেন, লালি সহ বিভিন্ন পণ্যাদি যানবাহন ট্রাকের ড্রাইভারগণ স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে থাকে। বিশেষ রোড নামানোর জন্য পয়েন্টগুলোর ব্যবসায়ীর মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা হয়। রডগুলো স্বল্প মূল্যে ৬০ টাকা কেজিতে ক্রয় করে পাঙ্গাসীর বিভিন্ন দোকানে ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে চোরাই কারবারিরা। এদিকে রোডের প্রকৃত মালিকগণ তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য থেকে প্রতারিত হচ্ছে। কোন সময় সময় ৩ লাখ টাকা বিনিময়ে ট্রাকের ড্রাইভাররা পুরো ট্রাকের রড বিক্রি করে চলে ট্রাক রেখে চলে যায়। পরবর্তীতে ট্রাকের মালিক ও পণ্যের মালিক সিরাজগঞ্জ সলঙ্গা থাকায় এসে মামলা করে চলে যান। ইতিমধ্যে একাধিক মামলা করার ঘটনাও ঘটেছে।
এলাকাবাসী বলছে, সামিদুলকে এখনি আইনে আওতায় না আনা হলে সিরাজগঞ্জ রোড এলাকায় সামিদুল একটি ত্রাসের নাম হবে। কোটি টাকা বনে গেলে সামিদুলকে প্রশাসন ধরতে পারবে না। এখনি সামিদুলকে আইনের আওতায় এনে তার হাতের ডানা ভেঙ্গে দিতে হবে।
সলঙ্গা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেন, কোন চোর, ডাকাত বিএনপির কর্মী বা নেতা হতে পারে না। আলোকদিয়ার সামিদুল কোন বিএনপির কোন পদে নেই। সেই বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন চোরাই মালামাল ক্রয়-বিক্রয় করছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, চোরাই মাল ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে বদ্ধ পরিকর। ইতিমধ্য আশরাফুল নামে একজনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। ঈদের আগে চোরাই পয়েন্টগুলো নিষ্ক্রিয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আর চোরাই পয়েন্টগুলো নিস্ক্রিয় হলে মহাসড়কে ডাকাতিও অনেকাংশ কমে যাবে।